পাহাড়ের প্রত্যন্তঞ্চলে বিস্ফোরক আইইডি পুঁতে মৃত্যুফাঁদ

পাহাড়ে ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠেছে সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। বান্দরবান জেলার রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি এবং রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে বিক্ষিপ্তভাবে মাটির নিচে বিস্ফোরক আইইডি (হাতে তৈরি বোমা) পুঁতে রেখে মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি করেছে বম জনগোষ্ঠীর বিপথগামী এ সশস্ত্র সদস্যরা। হাতে তৈরি বোমা বিস্ফোরণে সেনা কর্মকর্তাসহ সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। অপরদিকে কেএনএফ সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া বম জনগোষ্ঠীর বিপথগামী সদস্যদের শান্তির পথে ফেরাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জাতি-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, শুক্রবার সেনাবাহিনীর একটি টিম রুমা উপজেলার দুর্গম পাইনুম পাড়াতে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করতে যাওয়ার পথে ছিলোপি পাড়া এলাকায় কেএনএফ’র পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে মোন্নাফ হোসেন রাজু নামে সেনাবাহিনীর এক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় মো. রেজাউল নামে সেনাবাহিনীর আরেক সদস্য আহত হয়ে সম্মলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে ১ জুন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযানে গিয়ে ছিলোপি পাড়া এলাকায় কেএনএফ’র পুঁতে রাখা বিস্ফোরক আইইডি বিস্ফোরণে তুজাম (৩০) নামে এক সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়। তার আগে ১৭ মে রাঙামাটির বিলাইছড়ি জারুলছড়ি সীমান্তবর্তী এলাকায় সেনাবাহিনীর রুমা ২৮ বীর জোনের সেনা সদস্যদের টহল টিমের ওপরে গুলিবর্ষণে সেনাবাহিনীর ২ জন সৈনিকের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন-মো. আলতাফ আহম্মদ এবং মো. তৌহিদ। এ সময় সেনাবাহিনীর রুমা ২৮ বীর সেনাবাহিনীর অফিসার ক্যাপ্টেন ইশতিয়াক আহম্মদ শওকত এবং আরেকজন সেনা কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন।

৮ মে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে গোলাগুলিতে রোয়াংছড়ি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নেমথাং বম’সহ ৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ৭ এপ্রিল রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের খামতানপাড়া এলাকা থেকে বম জনগোষ্ঠীর ৮ জনের লাশ উদ্ধার করে যৌথবাহিনী। ২৭ এপ্রিল রুমা উপজেলার মুয়ালপি পাড়া এলাকা থেকে বম জনগোষ্ঠীর একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা সবাই পাহাড়ের বম জনগোষ্ঠীর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্য বলে জানা গেছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের সঙ্গে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে কয়েক মাস ধরে। ১৩ মার্চ সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিনের হামলায় সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিনের মৃত্যু হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সৈনিক রাকিবুল ইসলাম ও সৈনিক শিশির আহমেদ আহত হন। অপরদিকে কেএনএফ’র পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসী বাহিনী পৃথকভাবে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাসহ নির্মাণ কাজের ১২ জন শ্রমিককে এ পর্যন্ত অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিয়েছে। অপরদিকে ফেব্রুয়ারিতে পর্যটন স্পট বগালেকের রিসোর্ট ব্যবসায়ী লারাম বম’রকে অপহরণ করে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠেছে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। পার্বত্যবাসীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে এই সশস্ত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ডে। কেএনএফ’র অত্যাচার নির্যাতনে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার অনেক গ্রামের পাহাড়িরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। সম্ভাবনাময় উপজেলাগুলোতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে গোটা জেলা। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, হঠাৎ করেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা হিসাবে পরিচিত বান্দরবানকে অশান্ত অস্থিতিশীল করে তুলেছে কেএনএফ। সন্ত্রাসী বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে রুখতে ভিন্ন ভাবে ভাবতে হবে, ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে হবে সরকারকে। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে দেশের নাগরিকত্ব ভোগকারী কারা জড়িত তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে।

এদিকে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া বম জনগোষ্ঠীর বিপথগামী সদস্যদের শান্তির পথে ফেরাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে উদ্যোগ নিয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদ।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment

* বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরসেভেন.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।