১০ হাজার এমএফএস হিসাব জব্দ

দেশে ডিজিটাল মাধ্যমে হুন্ডির প্রবণতা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এর সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফরম মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস)। কিছু অসাধু এজেন্ট এ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। তাই হুন্ডির প্রবণতা ঠেকাতে কাজ করছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এমএফএস ব্যবহার করে হুন্ডিতে লেনদেন করায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ। যদিও এরই মধ্যে ৪ হাজার হিসাব সচল করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পর এজেন্ট ব্যাংকিংয়েও হুন্ডিতে লেনদেন হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

জানা যায়, বিদেশে শ্রমিক যাওয়া বাড়লেও হুন্ডির প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রত্যাশিত রেমিট্যান্স আসছে না। অন্যতম কারণ হিসাবে হুন্ডিকে চিহ্নিত করা হয়। এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এমএফএস-এর এজেন্টশিপ নিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এসব এজেন্টশিপের কাছে বিদেশ থেকে শুধু টাকার অঙ্ক ও নম্বর উল্লেখ করে নির্দেশনা আসে। সে আলোকে সুবিধাভোগীর নম্বরে এখান থেকে অর্থ পরিশোধ করা হয়। ফলে প্রবাসীদের অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় আসছে না। যার কারণে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে।

বিএফআইইউ প্রতিবেদনে দেখা যায়, এমএফএস ব্যবহার করে হুন্ডিতে টাকা আনার অভিযোগ ওঠার পর নিয়মিত তদারকি করছে সংস্থাটি। তদারকির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ২২৩ জন সুবিধাভোগীর হিসাব জব্দ করা হয়। এসব হিসাবে জব্দ করা অর্থের অঙ্ক ৩ কোটি ৫১ লাখ ২৯ হাজার ২৩৫ টাকা। এর মধ্যে বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করে আবার ৪ হাজারের বেশি হিসাব সচল করা হয়। সচল করে দেওয়া হিসাবের মধ্য ২৭৫টি হিসাবে বৈধ পথে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা এসেছে।

জানা যায়, এমএফএস-এর মাধ্যমে হুন্ডি লেনদেন ঠেকাতে ১০ মে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএফআইইউ। সেখানে এ প্রবণতা ঠেকাতে তাদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে মোবাইল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুন্ডি প্রতিরোধে প্রো-অ্যাক্টিভভাবে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় বিএফআইইউ।

এছাড়া এখন থেকে বাতিলকৃত এজেন্টদের অর্থ আটকে থাকবে, প্রয়োজনে সিজ করা হবে বলে জানানো হয়। পরীক্ষামূলকভাবে সন্দেহজনক চারটি হিসাব যাচাই করে তিনটিতেই হুন্ডির প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। এ পরিপ্রেক্ষিতে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবহার করে সারা দেশে কী অঙ্কের হুন্ডি হচ্ছে, তা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সতর্ক এবং কর্মপন্থা ঠিক করতে এরই মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা ১০টি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা বিশেষায়িত এ ইউনিট।

অন্যদিকে অবৈধ ফরেক্স, বেটিং ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্ট লেনদেন প্রতিরোধে কাজ করছে বিএফআইইউ। এ ধরনের ১৯টি সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করছে সংস্থাটি। এ সংক্রান্ত পাঁচটি কেস স্টাডি, নতুনভাবে লেনদেনে জড়িত ৫৭টি ওয়েবসাইট, ১১টি সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ও একটি অ্যাপ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিটিআরসিতে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment

* বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরসেভেন.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।