ফোরলেনের কাজ শেষ না হতেই সংস্কারের দরপত্র

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে ফোরলেনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তারপরও ওই সড়ক সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান করেছে মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। বিধান রয়েছে সড়ক সম্প্রসারণকালে ওই সড়কে পুনঃসংস্কার কাজ করা যাবে না। ফলে কানাঘুষা চলছে সংস্কার কাজের বিলের টাকা পুরোটা গিলে খাবে সওজের কর্মকর্তা ও চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদার।

সওজের সড়ক সংস্কার কাজের জন্য প্রতি অর্থবছরে দেড় কোটি টাকা বাজেট আসে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সাড়ে ৩ কোটি বাজেট আনা হয়েছে। এ বাজেট পেতে সহায়তা করেছেন সওজের কুষ্টিয়া সার্কেল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল। যার বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঝোড়পাড়ায়। ওই কর্মকর্তার এলাকার যুবলীগ নেতা মোসারফ হোসেন সড়ক সংস্কার কাজের ঠিকাদার। মেহেরপুর-কুষ্টিয়ার চেয়ে মেহেরপুর-কাথুলী সড়ক একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ার পরেও সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে না। অথচ কোনো এক অদৃশ্য কারণে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে শুধু লুটপাটের জন্য বলে জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা দাবি করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে-মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক ২০২১-২২ অর্থবছরে ফোরলেন সম্প্রসারণের দরপত্র আহ্বান করে সওজের কুষ্টিয়া সার্কেল অফিস। মেহেরপুর পোস্ট অফিস মোড় থেকে গাংনী হাসপাতাল পর্যন্ত ৭৯ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার ফোরলেনের চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদার মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক জহুরুল ইসলামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জহুরুল লিমিটেড। ফোরলেনে সড়ক সম্প্রসারণের পর ওই একই সড়কে ২৭ কিলোমিটার থেকে ৫২ কিলোমিটার পর্যন্ত মেহেরপুর সওজ সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান করেছে ২০২২-২৩ অর্থবছরে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে ১০ জানুয়ারি ৭২ লাখ টাকার ওই কাজের ঠিকাদারি দেওয়া হয়েছে মোজাহার এন্টারপ্রাইজকে। ওই সংস্কার কাজের সাব ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোসারফ হোসেন। চুক্তিপত্র অনুযায়ী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হয়েছে। সওজ সূত্র জানায়-মোসারফ হোসেন শুধু গাংনী বাজারে দুইশ মিটার রাস্তা সংস্কার কাজ করেছে। মেহেরপুর সওজের কর্মকর্তারা ওই কাজের বিল তুলে নিতে সহায়তা করছে।

চলমান ফোরলেন কাজের রাস্তায় সংস্কার কাজ বিষয়ে মেহেরপুর সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের কাছে ৭৫৫৭৯০ আইডি নম্বরে কোনো সংস্কার কাজ হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আইডি সঠিক না বলে দাবি করেন। একটি মাধ্যমে পাওয়া সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বানের প্রিন্ট কপি দেখিয়ে এটা কোন কাজের দরপত্র জানতে চাইলে তিনি রাগান্বিত হয়ে ওঠেন। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ সহকারী প্রকৌশলী অথবা অফিস সহকারী সোহেল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

সংস্কার কাজের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহিন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে কোনো সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়নি এবং আইডি সঠিক নয় বলে জানান। তিনিও নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

চুয়াডাঙ্গা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মঞ্জুরুল করিম মেহেরপুর জেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। এক সপ্তাহে একদিনেও তাকে অফিসে দেখা মেলেনি। ওই প্রকৌশলীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে এসএমএসের কোনো জবাব দেননি তিনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment

* বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরসেভেন.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।