আর্থিক অনটনে ধুঁকছে যেসব খেলা

গুলিস্তানের ক্রীড়া কমপ্লেক্সে গেলে যে কারো মনে হতে পারে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বড়সড় কোনো বাজার দেখছেন৷ অথচ সেটা দেশের খেলাধুলার ‘হাব’৷ একই জায়গায় সন্ধ্যায় গেলে মনে হবে ভবঘুরেদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র৷

পুঁতিগন্ধময় স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ বলতে যা বোঝায় ঠিক সেই অবস্থা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের৷ স্টেডিয়ামের এই বাহ্যিক চিত্র দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও প্রভাব ফেলে৷

ছোট ছোট এক-দুই কক্ষের অফিস নিয়ে একেকটি ফেডারেশন, যাদের অনেকের খেলার নিজস্ব মাঠ নেই৷ অন্যের মাঠ ধার নিয়ে বছরে একবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করা হয়৷ আন্তর্জাতিক আসরে খেলার সুযোগ পেলে সরকারি অনুদানে এক বা দুই মাসের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে তাতে অংশগ্রহণ করতে হয়৷

ঢাকার কয়েকটি ক্রীড়া ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আর্থিক সংকটে বিপর্যস্ত অবস্থার কথাই জানা গেছে৷ ‘জাদুর শহর’ ঢাকার ক্রীড়াঙ্গন বলতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম আর মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে কিছু চেয়ার-টেবিল সর্বস্ব এক-দুই কক্ষের ছোট্ট অফিস৷

বিশ্বের যে-কোনো দেশ সম্পর্ক এখন মুহূর্তেই জানা যায় সার্চ ইঞ্জিনের সহায়তায়৷ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন সম্পর্কে সার্চ ইঞ্জিনে ঢুঁ দিলে প্রতি ক্লিকেই থাকবে ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের কথা৷ সেখানে বাংলাদেশের ক্রীড়াদূত সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমানরা৷

অথচ বাংলাদেশে ৫২টি ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে৷ বেশিরভাগ খেলাকে নিজস্ব মাঠ বা প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা দিতে পারেনি রাষ্ট্র৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর না আছে আর্থিক সক্ষমতা, না আছে দক্ষ সংগঠক, প্রশিক্ষক৷

ফেডারেশনের কর্মকর্তারা মনে করেন, যুগের পর যুগ ধরে তাদের যে ব্যর্থতার গল্প, তার পেছনে রয়েছে আর্থিক অস্বচ্ছলতা৷ এ কারণে বছরের পর বছর কাজ করেও দীর্ঘমেয়াদে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন না তারা৷

কেন এই অনটন তার খোঁজ করতে গেলে বেরিয়ে আসে সরকারের অপ্রতুল অনুদান, পৃষ্ঠোপোষকতায় অনাগ্রহ, খেলোয়াড়দের কর্মসংস্থান না থাকার মতো বিষয়গুলো৷

তবে বিপরীত চিত্রও দেখা যায়৷ সংগঠকরা নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে খেলা চালান এবং পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন অনেকটা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতোই৷

অ্যাথলেটিক্স বিশ্বের বড় খেলাগুলোর একটি হলেও বাংলাদেশে নয়৷ এই খেলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করায় বড্ড অনিহা৷ কালেভদ্রে স্পন্সর পাওয়া গেলেও তা খুব একটা আকর্ষণীয় নয়৷ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু জানান, পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা দিতে রাজি থাকে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান৷ অথচ একটি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ করতেই খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা৷ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের বার্ষিক আয় এক কোটি টাকার মতো৷

সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বলেন, আমরা ফেডারেশনের খরচ বাবদ ১৯ লাখ টাকা পাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)-র কাছ থেকে৷ উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রস্তাবনা দেওয়া হলে প্রশিক্ষণ, বিদেশের খেলায় অংশগ্রহণে বছরে আরও ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা দেয় এনএসসি৷ এই টাকা দিয়ে অ্যাথলেটিক্স চালানো যায় না৷ আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন থেকেও বছরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার ডলার পাওয়া যায়৷ এই টাকা দিয়ে অ্যাথলেটিক্সের কার্যক্রম চলে৷ খেলার থেকেও বেশি বাজেট লাগে প্রশিক্ষণে, বিদেশি কোচ নিয়োগ দিতে৷ স্পন্সর না থাকায় সবকিছু ছোট পরিসরে করতে হয়৷ এছাড়া আমাদেরকে সাশ্রয়ও করতে হয় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে৷ কিছু অর্থ বাঁচিয়ে দুই কোটি টাকার মতো ফান্ড রেখেছি৷ কারণ, অস্বচ্ছল অ্যাথলেটদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে৷

মন্টু দাবি করেন, প্রতিটি টাকার হিসেব রাখতে হয়৷ সরকারি টাকার হিসাব সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হয়৷ আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন তাদের হিসেব বুঝে নেয় নিজস্ব অডিট প্রক্রিয়ায়৷ তিনি বলেন, আমরা আয়-ব্যয়ের হিসাব কমিটিতে উপস্থাপন করি৷ এজিএমএ উপস্থাপন করি৷ ক্রীড়া পরিষদ থেকে যে টাকা দেওয়া হয় তা থেকে ট্যাক্স এবং ভ্যাট ১৫ শতাংশ কেটে রাখে৷ তারাও হিসেব নেয়৷ আন্তর্জাতিক ফেডারেশনকে আমরা কার্যক্রমের প্রস্তাবনা দিলে সে আনুযায়ী অনুদান দেয় এবং সেগুলো মনিটরিং করে৷

সে তুলনায় সাঁতার ফেডারেশনের অবস্থা বেশ ভালো৷ পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে৷ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বদরুল সাইফ বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা আসে৷ আমরা স্পন্সর থেকে বাকি টাকা জোগাড় করি৷ আমাদের বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়৷ রাষ্ট্রীয় যে কাঠামো সেভাবে আমাদের চলা সম্ভব না৷ কয়েকটি ভালো মানের স্পন্সর থাকায় সাঁতারের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি৷ আমরা যখন ক্যাম্প করি তখন অনেক টাকা লাগে৷ বছরে আমাদের বিদ্যুৎ বিলই আসে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা৷ ক্যাম্প চললে ৩ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়৷ যেমন আমরা একটা প্রোগ্রাম করেছি ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ৷’ এজন্য তিন বছরে ১৪ কোটি টাকা লেগেছে৷ আমি বলবো অন্য ফেডারেশনের থেকে অনেক ভালো আছি৷

 

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment

* বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরসেভেন.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।