বৈরী পরিস্থিতির মুখে পড়বে শিল্প খাত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) খুশি করতে গিয়ে চরম ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে দেশের স্বনামধন্য শিল্পোদ্যোক্তাদের। রোববার ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারের এমন বৈরী আচরণ আরও স্পষ্ট হয়েছে। কেননা ঋণের সুদের হার বাড়ানোকেই মুদ্রানীতির প্রধান হাতিয়ার বানানো হয়েছে। এ কারণে রপ্তানীমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ শিল্প ও ব্যবসা সেক্টরের প্রতিটি ধাপে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কারণ, ডাবল ডিজিটে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে শিল্প চালাতে গেলে নির্ঘাত উৎপাদন খরচ আরও বাড়বে। সে তুলনায় পণ্যের দাম যেমন পাওয়া যাবে না, তেমনই বিক্রিও কমে যাবে। এজন্য মুদ্রানীতির এমন বিরূপ অবস্থানকে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মোটেই ভালোভাবে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন, এটা সে ফ আত্মঘাতী। এতে বেশি বিপাকে পড়বেন শিল্প খাতের ভালো ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতিকে মন্দার কবল থেকে উদ্ধার করতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উৎপাদন খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ানো।

কিন্তু মুদ্রানীতিতে সেটি করা হয়নি। উলটো বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরকারকে বেশি ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেসরকারি খাত। কারণ, কর্মসংস্থান তৈরি না হলে দেশে উৎপাদন বাড়বে না। মানুষের আয় বাড়বে না। ফলে মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়বে।

সূত্র জানায়, করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে সাড়ে তিন বছর ধরে দেশে বিনিয়োগ কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এবার এর পক্ষে সহায়ক নীতি নেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু এবারও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করায় বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানসহ সবকিছু বাধাগ্রস্ত হবে। এসব খাতকে উত্তম সহযোগিতা করার কোনো নীতি রাখা হয়নি। উলটো আরও বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। অথচ দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৯৫ শতাংশই হচ্ছে বেসরকারি খাতে।

মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি খাতে। সেখানে উচিত ছিল-যারা সত্যিকারের ভালো ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা, যাদের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারের কোনো অভিযোগ নেই; তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটি না করায় ভালো ব্যবসায়ীরা আরও হতাশ হবেন এবং ভবিষ্যতে তারা শিল্প খাতে নতুন করে বিনিয়োগ করার সাহস দেখাবেন না।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঘোষিত মুদ্রানীতি ব্যবহার করে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা যাবে না। এতে সুদের হার ও ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতে পারে; কিন্তু মূল্যস্ফীতির হারে লাগাম টানা সম্ভব হবে না। বেসরকারি খাতে ঋণের লাগাম বেশি মাত্রায় টানা হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। সুদের হার ও ডলারের দাম বাড়ার কারণে শিল্পের খরচ বেড়ে যাবে। ফলে বেসরকারি খাত আরও প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment

* বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরসেভেন.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।