দুর্নীতির টাকা আর সুইস ব্যাংকে রাখা নিরাপদ মনে করছে না বাংলাদেশিরা!

প্রতিবছর আমানতের তথ্য ফাঁস করায় দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার করা টাকা সুইস ব্যাংকে রাখাও এখন আর নিরাপদ মনে করছে না বাংলাদেশিরা।  এ কারণে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক (সুইস ব্যাংক) থেকে এক বছরে ১০ হাজার ১১৭ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশিরা। অবশিষ্ট আছে ৬৮৪ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ১২৪ টাকা ধরে)।

কিন্তু এই টাকা কোথায় গেছে, কে নিয়েছে, এর কোনো তথ্য ব্যাংকটির বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। তবে ব্যাংকের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য মজুত আছে।

ব্যাংকের হিসাবে ২০২২ সালে বাংলাদেশিদের আমানত ৫ কোটি ৫২ লাখ সুইস ফ্র্যাংক। আগের বছর যা ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ ফ্র্যাংক। বৃহস্পতিবার সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকটি তাদের ওয়েবসাইটে এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। তবে কোনো বাংলাদেশি তার নাগরিকত্ব গোপন রেখে টাকা জমা করলে, তার তথ্য এই প্রতিবেদনে নেই। সুইস ব্যাংকে আমানতের দিক থেকে এ বছর বিশ্বে প্রথম অবস্থানে যুক্তরাজ্য।

এক বছরে হঠাৎ বিশাল অঙ্কের টাকা উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এর আগে নির্বাচনি বছরগুলোয় যেখানে আমানত বেড়েছে, এবার সেখানে এক বছরে আমানত কমেছে ৯৫ শতাংশ।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে তথ্যগুলো জানতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত কে বা কারা টাকাগুলো সুইস ব্যাংক থেকে তুলে নিল এবং কোথায় নিয়ে গেল-এসব বিষয়ে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সুইস ব্যাংকের বাইরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের অর্থ পাচার বাড়ছে। তাদের মতে, অনিশ্চয়তার কারণে বিত্তবানরা দেশকে নিরাপদ মনে করছেন না। ফলে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ পাচার হচ্ছে। ঋণের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা, বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ এবং ঘুস-দুর্নীতির টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শুধু সুইস ব্যাংক নয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টেও বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের তথ্য আসছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারণ, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের যে টাকা রাখা হয়েছে, এর বড় অংশই মূলত দুর্নীতির।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের মূলত তিনটি কারণ। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে দুর্নীতি। কারণ, দুর্নীতি বেড়েছে বলেই অর্থ পাচারও বেড়েছে। এছাড়া দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণেও অর্থ পাচার বাড়ছে। তার মতে, পাচার রোধ করতে হলে দুর্নীতি কমিয়ে আনার বিকল্প নেই। পাশাপাশি নাগরিক জীবনেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

বাংলাদেশিদের আমানত: ২০২২ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের স্থিতি ৫ কোটি ৫২ লাখ ফ্র্যাংক। আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে যা ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ ফ্র্যাংক। ২০২০ সালে ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৯ সালে ৬০ কোটি ৩০ লাখ। ২০১৮ সালে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ। ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ। তবে শুধু সুইস ব্যাংক নয়, অন্যান্য সংস্থা থেকেও টাকা পাচারের তথ্য আসছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  বলেন, অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে টাকা পাচার হয়। বাংলাদেশের বিত্তবানরা নিজ দেশে তাদের সম্পদ রাখাকে নিরাপদ মনে করছে না। তাই তারা বিদেশে টাকা পাচার করছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment