টাইটান আরোহীদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ

আটলান্টিক সাগরে নিখোঁজ সাবমেরিন টাইটানের সন্ধান না মেলায় ক্ষীণ হচ্ছে পাঁচ আরোহীকে উদ্ধারের সম্ভাবনা। এখন চরম উৎকণ্ঠায় আছেন তাদের পরিবার ও স্বজনরা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হিসাবে, সাবমেরিনটির অক্সিজেন বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময়ে) দুপুর ৪টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এর মানে ডুবোজাহাজটিতে এখন টিকে থাকার জন্য ২০ ঘণ্টার কম অক্সিজেন আছে।

টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ সাগরের নিচে যে জায়গায় তা কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের সেন্ট জনস এলাকা থেকে ৪৩৫ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। সে জায়গায় এখন ১২টির মতো উদ্ধার জাহাজ হাজির হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশেষায়িত সংস্থা উদ্ধারকাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। এ কাজে তারা জাহাজ ছাড়াও সামরিক বিমান ও ‘সোনোবয়া’ ব্যবহার করছে, যা দিয়ে সাগরের অনেক নিচে বস্তুর অবস্থান নির্ণয় করা হয়।

টাইটানের মাদার শিপ পোলার প্রিন্সের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সাগরের নিচে কেবল বা তার বসানোর জাহাজ ডিপ এনার্জি এবং অন্য তিনটি জাহাজ। আরও জাহাজ সেখানে যাচ্ছে।

এসব জাহাজের কতগুলোতে এমন সব দূরনিয়ন্ত্রিত জলযান রয়েছে (আরওভি), যা সাগরের তলদেশে অনুসন্ধানে ব্যবহার করা হয়। তবে জানা গেছে, একমাত্র ফরাসি গবেষণা জাহাজ এল অ্যাটালান্টাতেই এমন ডুবোযান রয়েছে, যেটি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ যে গভীরে সে দূরত্বে যেতে সক্ষম। বুধবার দিনের শেষ দিকে ফরাসি জাহাজটি ওই জায়গায় পৌঁছতে পারে বলে জানা গেছে।

আর্কটিক অঞ্চলে রসদ সরবরাহের কাজে ব্যবহার হয় এমন জাহাজও গুরুত্বপূর্ণ কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে সেখানে যাচ্ছে।

মার্কিন নৌবাহিনী এমন একটি জাহাজ পাঠাচ্ছে যেটি সাগরের গভীর তলদেশে থেকে ভারি জিনিস তুলে আনতে সক্ষম।

মার্কিন কোস্টগার্ডের ক্যাপ্টেন জেমি ফ্রেড্রিক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ক্ররা জটিল এ উদ্ধার অভিযানে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন।

ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের ডুবোজাহাজ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালিস্টার গ্রেগ বলছেন, একটা সমস্যা হচ্ছে— উদ্ধারকারীরা নিশ্চিত নয় ঠিক কোথায় তাদের খোঁজা উচিত— সাগরের তলদেশে না ওপরে। সাগরের তলদেশ এবং ওপরের মাঝামাঝি কোথাও এই ডুবোযানটি রয়েছে, সে সম্ভাবনা খুবই কম। ফলে এই অনুসন্ধান খুবই বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

২২ ফুট লম্বা ডুবোযানটির সন্ধানে উদ্ধারকারীদের অনেক গভীরে— এমনকি চার কি.মি গভীরেও যেতে হতে পারে। কারণ পানির ভেতর দিয়ে রেডিও বা জিপিএস সংকেত যেতে পারে না।

কানাডার পি-থ্রি অরোরা বিমান আকাশ থেকে সোনোবয়া ফেলে ডুবোযানটির অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করছে। শত্রুপক্ষের সাবমেরিন শনাক্ত করতে এই সোনোবয়া ব্যবহার করা হয়।

জাহাজের প্রপেলার বা যন্ত্রের শব্দ এসব সোনোবয়ায় ধরা পড়ে। এমনকি ক্ররা যদি জাহাজের খোলের ভেতর কোনো কিছু দিয়ে জোরে আঘাত করতে থাকে বা কোনো শব্দ সংকেত পাঠায় তা হলেও সেসব শব্দ এসব বয়ায় ধরা পড়তে পারে।

মার্কিন মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে উদ্ধারকাজে সমন্বয়কদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের কাছে পাঠানো গোপন একটি বার্তায় বলা হয়েছে যে, সাগরের নিচে আধাঘণ্টা পর পর জাহাজের খোলের গায়ে আঘাত করার মতো শব্দ শোনা গেছে।

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে গভীর সমুদ্রে সাবমেরিনটি নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর, উদ্ধারকারী দলগুলো দ্রুত তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে।

কিন্তু ১২৫০০ ফুট; প্রায় আড়াই মাইল সমুদ্র গভীরতায় নিমজ্জিত টাইটানকে উদ্ধার করতে পৃথিবীতে মাত্র দুটি জাহাজ আছে।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment

* বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরসেভেন.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।