৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে আসক্ত

ইন্টারনেটের কারণে ৯১ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এদের মধ্যে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, তাদের সমস্যার ‘পুরোপুরি দায়’ ইন্টারনেটের। আর ‘মোটামুটি দায়ী’ করতে চায় ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাকিরাও তাদের মানসিক সমস্যার জন্য ইন্টারনেটকে কমবেশি দায়ী মনে করছে। কিন্তু এক্ষেত্রে দায়ী করছে না মাত্র ৮.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। শনিবার সংস্থাটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সমীক্ষায় ইন্টারনেটসহ মোবাইল-কম্পিউটারের মতো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস (যন্ত্র) ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীদের সবমিলে ১৬ ধরনের সমস্যা মোকাবিলার তথ্য বের হয়ে এসেছে। মূলত করোনাকালে অনলাইন ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচিত হয়। এ সময় তারা অবাধে ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ পায়। সেটিই তাদের মধ্যে আসক্তি তৈরি করে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থীই এখন আসক্তি অনুভব করে। সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামার বিপ্লব চন্দ্র সরকার, টাঙ্গাইলের ডেপুটি সিভিল সার্জন ড. মারুফ আহমেদ খান এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেট বর্তমানে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে ইন্টারনেট কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকেই। কিন্তু ইন্টারনেট তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকাংশেই নেতিবাচক ফল নিয়ে আসছে। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭২.২ শতাংশ জানিয়েছে, তারা তাদের জীবনে কখনো না কখনো মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।

এতে বলা হয়, ৩৮.২ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনাবিষয়ক কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বাকিদের কেউ অবসর সময় কাটাতে, আবার গেম খেলতে বা ভিডিও দেখাসহ অফলপ্রসূ কাজে ইন্টারনেটে বেশি সময় ব্যয় করে। মাত্র ৪২.৯ শতাংশ যোগাযোগের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। অপরিমিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছে ৬২.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মাঝে সর্বোচ্চ দিনে ১১ ঘণ্টার ওপরে অনলাইনে থাকা শিক্ষার্থী ৬.২ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন ৩২.৩ শতাংশ ব্যবহার করে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৮১.৫ শতাংশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ইন্টারনেট। তাদের মধ্যে ৩৪.৩ শতাংশ জানায়, ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ‘প্রচণ্ড নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে। ৫৭.২ শতাংশের স্বাভাবিক জীবনে ‘কিছুটা নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে। নেতিবাচক প্রভাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫৯.৬ শতাংশ মনে করে, ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ বিঘ্নতার জন্য দায়ী। ১৭.৮ শতাংশ ইন্টারনেটে পর্ন দেখা, সাইবার ক্রাইম, বাজি ধরা, বুলিং করা প্রভৃতি অপ্রীতিকর কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পড়েছে। ২৩ শতাংশ ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছে। ৩৫.৬ শতাংশ ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করছে এবং ২০.৩ শতাংশ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে তারা।

সমীক্ষা অনুসারে, পড়াশোনার কাজে ৯৪.১ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহার করে। কিন্তু পড়াশোনার ফাঁকে অনলাইনে প্রবেশ করলে ৫২.৬ শতাংশের পড়াশোনার মনোযোগ হারিয়ে যায়। এছাড়াও ২৫.২ শতাংশের পড়া মনে রাখতে অসুবিধা হয়, ৫৭ শতাংশ মনে করে অযথা সময় নষ্ট হয় এবং ৩১.২ শতাংশের পড়াশোনায় অনীহা জন্ম নেয়।

ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী আসক্তি অনুভব করে। এ কারণে ৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘কখনোই’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করে না। ১৯.২ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায়, তারা ‘খুব একটা’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করে না। মাঝেমধ্যে পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দেয় ৪৪.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে আড্ডা না দেওয়া শিক্ষার্থী এবং পরিবারের মাঝে একধরনের দূরত্ব তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তাদের আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে। ৬.৫ শতাংশের নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। ২৪ শতাংশ ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনে লক্ষ্যচ্যুত হচ্ছে এবং ২৫.৭ শতাংশের অফলপ্রসূ কাজে সময় নষ্ট হচ্ছে বলে জানান।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment

* বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরসেভেন.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।