মেগা প্রকল্পে আশা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন

আগামী অর্থবছরের বাজেটে কয়েকটি মেগা প্রকল্পে আশার কথা তুলে ধরা হলেও বাস্তব প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি একটিও। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। মেট্রোরেল লাইন-৬ আংশিক চলাচল করছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের বিষয়ে আলাদা করে উপস্থাপন করা হয়নি বাজেট বক্তব্যে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব দেওয়ার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

এছাড়া আরও কয়েকটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা মেগা ৮ প্রকল্পের গড় অগ্রগতি এখনো ৮০ দশমিক ৫১ শতাংশ। এপ্রিল পর্যন্ত এ চিত্র ওঠে এসেছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে। সেই সঙ্গে কিছু মেগা প্রকল্পে আগামী অর্থবছর কমছে বরাদ্দও।

বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত র‌্যাম্পসহ ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এর বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ করা হবে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া গাজীপুর হতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। কিছু অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ চলছে। এটি উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে কমলাপুর পর্যন্ত এ মেট্রোরেলের কাজ শেষ হবে। এছাড়া আরও দুটি মেট্রোরেলের কাজ চলছে। যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর কাজ চলছে। সেই সঙ্গে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং ঘুনধুম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে কাজ এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি আরও বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে তুলে ধরেন তিনি।

কিন্তু আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ কমছে ৫টি মেগা প্রকল্পের। এগুলো হলো, রূপুপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১১ হাজার ১৩৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু আগামী অর্থবছর বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হচ্ছে নয় হাজার ৭০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (পিপিপি) প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ২১৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ১১৮ কোটি টাকা।

কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে বরাদ্দ আছে এক হাজার ৭২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। নতুন বরাদ্দ কমে ধরা হচ্ছে ৭৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ আছে পাঁচ হাজার ৯০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ কমে হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া পায়রা বন্দর উন্নয়ন আনুষঙ্গিক কার্যক্রম প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ২৮৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২৫০ কোটি টাকা।

এদিকে ৩১ মে আইএমএডি থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুরু থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা ৮ প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার ৪৭২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলোর গড় ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ছয় হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলো হলো-পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের নিকটে ঘুনধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।

প্রকল্পভিত্তিক অগ্রগতি হচ্ছে, গত বছরের ২৫ জুন উদ্বাধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হয়নি। এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৬৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ গত বছর ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত সময়ে জনগণের চলাচলের জন্য খুলে গেছে এ অংশটি। কিন্তু পুরো প্রকল্প শেষ হতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

শুরু থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ৬৭২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। দেশের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। শুরু থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৪৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৩ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৫৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

আইএমইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৬ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ শতাংশ। এছাড়া মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্পযুক্ত) প্রকল্পটির এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৪২৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৬০ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ৭০ শতাংশে।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটিতে এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯২ দশমিক ৭২ শতাংশ। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮২ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment

* বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরসেভেন.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।