দেশে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর বিষয়টি বহুল আলোচিত হলেও ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত না থাকার বিষয়টি উদ্বেগজনক। ভেজাল খাবার খাওয়ার কারণে দেশে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন জেলায় তৈরি নানা ব্র্যান্ডের মানহীন ও অননুমোদিত আইসক্রিম, মালাই, ললি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুদি দোকান ছাড়াও অনেকে সাইকেল-ভ্যানে মাইকিং করে বিক্রি করছে এসব।
জানা গেছে, এগুলো ফুড গ্রেডহীন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হয়। গরমে তৃষ্ণা মেটাতে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রায়ই ফুটপাতে বিক্রি হওয়া বাহারি রঙের আইসক্রিম এবং এ ধরনের ঠাণ্ডা পানীয় খেয়ে থাকেন। উৎপাদকরা এগুলো মুখরোচক করতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর উপাদান মিশিয়ে থাকেন, যা মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি আইসক্রিম ধরনের খাদ্যে বিদ্যমান সালমোনেলা নামক জীবাণুতে ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশনের আশঙ্কাও রয়েছে।
মানসম্মতভাবে তৈরি আইসক্রিম পরিমিত খেলে সমস্যা নেই। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান আইসক্রিমে ফুডগ্রেডবিহীন রং মেশায়, চিনির পরিবর্তে অন্য কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করে, সেসব প্রতিষ্ঠানে তৈরি আইসক্রিম খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের আইসক্রিমে কম দামি ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয়। জানা যায়, মাছ সংরক্ষণের জন্য যে কারখানায় বরফ তৈরি করা হয়, সেই কারখানাতেই ক্ষতিকর রং ব্যবহার করে আইসক্রিম ও এ ধরনের খাদ্য তৈরি করা হয়। কোন প্রতিষ্ঠানের আইসক্রিমে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো হয়, সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বোঝা সম্ভব নয়। কাজেই যেসব প্রতিষ্ঠানের আইসক্রিমে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয়, সেগুলোকে শনাক্ত করার জন্য সারা বছর ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা উচিত।
বস্তুত সারা দেশেই ফুটপাতে এবং ছোট-বড় বিভিন্ন দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মানহীন ও ভেজাল পণ্য। মাঝেমাঝে অভিযান চালিয়েও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্য এমনকি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ভেজাল হওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে উদ্বেগজনক। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, নকল কারখানার মালিক ও ভেজাল পণ্য বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক সরকারি সংস্থা অভিযান চালালেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দৃষ্টান্ত কম। আমরা মনে করি, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্যে ভেজাল রোধ করতে হবে যে কোনো উপায়ে।