বাণিজ্য ঘাটতি ১ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। তাই রপ্তানির টাকা দিয়ে আমদানির ব্যয় পুরোপুরি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।

এতে তৈরি হয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ১৪৬১ কোটি ৩০ লাখ (১৪ দশমিক ৬১ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৮ টাকা ধরে) এর অঙ্ক ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। ব্যাংকাররা জানান, ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত দেওয়া হয়েছে।

এতে এলসির হার কমলেও আমদানি দায় পরিশোধ কমেনি। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়ও কমে গেছে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহেও দেখা দিয়েছে নিম্নগতি। পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ সহায়তার ছাড়ও তুলনামূলক কম। এতে তৈরি হয়েছে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৫ হাজার ৩৯৩ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এ সময় রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৯৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য। এতে ১ হাজার ৪৬১ কোটি ৩০ লাখ (১৪ দশমিক ৬১ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮২০ কোটি টাকা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ও আশানুরূপ রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ না থাকায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ছে বাংলাদেশ। মার্চ মাস শেষে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬৫০ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবার পেছনে দেশের ব্যয় হয়েছে ৯৪০ কোটি ডলার। সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৭৯ কোটি ডলার।

চলতি হিসাবের ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) : চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন ঋণাত্মক হয়েছে।

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬৪ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৪৩৪ কোটি ডলার।

ওভারঅল ব্যালান্স : সামগ্রিক লেনেদেনেও (ওভারঅল ব্যালান্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮১৬ কোটি ডলার। এই সূচকটি আগের বছর একই সময় ছিল ৩০৯ কোটি ডলার। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৫২৯ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

এফডিআই বেড়েছে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ : দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে বাংলাদেশ যেখানে ৩৫৩ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩৭৮ কোটি ডলারে উঠেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Comment

* বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরসেভেন.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।