আনিস একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে সম্মানসহ মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করেছেন। মেধাবী হওয়ার পরও চাকরির জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরছেন, কিন্তু পাচ্ছেন না। অবশেষে তিনি বুঝতে পারেন, প্রযুক্তির এ যুগে প্রযুক্তির ওপর ভর করেই তাকে বেকারত্ব ঘোচাতে হবে। সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটরের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশার ওপর ভর করেই তাকে জীবন চলার পথে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কীভাবে? তার এ বিষয়ে প্রাথমিক কোনো ধারণাই নেই। এমন পরিস্থিতিতে তার কাছে এসে ধরা দেয় আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ’র আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রামের মতো ‘সোনালী সুযোগ’।
রিমি সুলতানা ছোটোবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেছেন সফ্টওয়্যার ডেভেলপার হবেন। বিশ্বজুড়ে কাজ করবেন ফ্রিল্যান্সার হয়ে। প্রোগ্রামিংয়ের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় জড়াবেন নিজেকে। কিন্তু অজপাড়াগাঁয়ের মাদ্রাসা থেকে পাশ করা এক ছাত্রী কি পারবেন তার স্বপ্ন পূরণ করতে? কে দেখাতে পারে তার সেই স্বপ্ন পূরণের পথ? কোনো কূলকিনারা না-পেয়ে তিনি হতাশায় নিমজ্জিত হন। অকূল পাথারে ভাসতে ভাসতেই তিনি পেয়ে যান আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ’র আইটি স্কলারশিপের মতো যুগান্তকারী প্রোগ্রামের খোঁজ।
ওপরের দুটো চিত্রই কল্পিত। কিন্তু এমন হাজার হাজার স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণী ছড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে। তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-বাংলাদেশ ইসলামিক সলিডারিটি এডুকেশনাল ওয়াকফ (আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ)। প্রোগ্রামটি ক্যারিয়ার কনভার্টর হিসাবে এ যাবত দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে। এই স্কলারশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে যারা তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে চাকরি করতে আগ্রহী, তারা যেকোনো বিভাগের স্নাতকধারী হোক না কেন, অল্প সময়ের মধ্যেই তাদেরকে প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে তোলা হয়।
আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ বাংলাদেশ সরকার এবং সৌদি আরবের জেদ্দাস্থ ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। তথ্যপ্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের যুবসমাজের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ নিজস্ব অর্থায়নে কর্মমুখী শিক্ষা ও বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন, অর্থায়ন এবং বাস্তবায়ন করে থাকে। আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম কর্তৃপক্ষ চাকরি বাজারের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ কোর্সগুলো পরিচালনা করে আসছে। এ কোর্সগুলো তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পিত ও পরিচালিত হওয়ার কারণে হাজার হাজার স্কলারশিপ সম্পন্নকারীরা ক্যারিয়ার গড়ায় সাফল্য অর্জন করেছেন। সে কারণে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আইটি স্কলারশিপে আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার উন্মুক্ত দিগন্ত।
চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারা সর্বদা প্রাধান্য দিয়ে থাকেন প্রার্থীর চাকরি প্রাসঙ্গিক কাজের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতাকে। চাকরিক্ষেত্রে কাজের দক্ষতা শুধু অর্জন করা সম্ভব ওই বিষয়ে বিশেষায়িত শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ও প্রশিক্ষণের মাধমে। কিন্তু নিয়োগকর্তাদের প্রত্যাশিত দক্ষতার সঙ্গে চাকরি প্রার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতার সামঞ্জস্য না থাকলে চাকরি প্রার্থী যেমন চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়, তেমনি নিয়োগকর্তারাও তার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল পেতে ব্যর্থ হয়। আর এই বিষয়টিকেই সমন্বয় করছে আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ’র প্রোগ্রামগুলো।
আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রামের ডিপ্লোমাধারীদের নিয়োগকারী ওপাস টেকনোলজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও জাফর ইকবাল বলেন, আইএসডিবি- বিআইএসইডব্লিউ আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রামের সঙ্গে আমি বেশ পরিচিত। আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রামের ডিপ্লোমাধারীরা দীর্ঘদিন ধরে ওপাস টেকনোলজিতে সফলভাবে কাজ করছে। আমাদের অধিকাংশ সফটওয়্যার ডেভেলপারই আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রামের ডিপ্লোমাধারী। ওপাস টেকনোলজি লিমিটেড এর সফটওয়্যার আইটি স্কলারশিপের ডিপ্লোমাধারীরাই তৈরি করছে যা দেশের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে এবং বিদেশেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলমান। ২০১২ সাল থেকে ওপাস টেকনোলজিতে ৪০ জনের অধিক আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ ডিপ্লোমাধারী সফটওয়্যার ডেভেলপার ও নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার কর্মরত আছে।
ইরা ইনফোটেক লিমিটেডের সিইও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ এবং ইআরপি সলিউশন তৈরিতে আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রামের ডিপ্লোমাধারীরা সরাসরি জড়িত। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২৫ জনেরও বেশি আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ এর ডিপ্লোমাধারী ইরা ইনফোটেকে কর্মরত আছেন। এখন পর্যন্ত আমরা ওরাকল, জাভা এবং নেটওয়ার্কিং ট্র্যাক থেকে আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ ডিপ্লোমাধারীদের নিয়োগ করেছি। আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ ডিপ্লোমাধারীদের দীর্ঘদিনের নিয়োগকর্তা হিসেবে, আমি প্রোগ্রামের গুণমান এবং বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে খুব পরিচিত। এ প্রোগ্রামের ডিপ্লোমাধারীরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে নির্ভরযোগ্য আইটি পেশাদার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তারা আমাদের এখানে সফলতার সাথে কাজ করছে। এমনকি আমাদের টিম লিডারদের একজন আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ’র ডিপ্লোমাধারী।
বাংলাদেশের আইটি শিল্পের চাহিদা অনুসারে দক্ষ জনবল সর্বদা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারে না। আইটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম এ ব্যবধান কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখন পর্যন্ত ৯৪৩২ জন দক্ষ আইটি প্রফেশনাল আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে এবং বিদেশে ২৩১৫টি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ বাংলাদেশের একমাত্র আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, যেখানে যে কোনো বিভাগ (বিজ্ঞান, বাণিজ্য বা মানবিক) থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, আন্তর্জাতিক মানের ও পেশাদার আইটি প্রশক্ষিণে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে তথ্যপ্রযুক্তিতে একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন করতে না পারলেও আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ করে দেয় আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ।